এস এম বদরুল আলম॥ করোনা-দূর্যোগ মোকাবেলায় দেশজুড়ে চলছে কঠোর লকডাউন। যশোরে আরও কঠোর অবস্থা। এরই মধ্যে যশোরে বেড়ে চলেছে করোনা রোগীদের প্রাদূর্ভাব। প্রতিদিনই যশোর সদর হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাসপাতালের গেটে কিছু সময় দাঁড়ালেই দেখা যায় দূরধূরান্ত থেকে অ্যাম্বুলেন্সের করে রোগীদের আসা-যাওয়া। হাসপাতাল গুলিতে নেই তীল ধারণের ঠাই। তবুও নানান সমস্যা নিয়ে দুর-দুরান্ত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসেন এই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে। কিছু মানুষ চিকিৎসা সেবা নিয়ে তাদের বাড়িতে ফিরে যান আর যারা গুরুতর অসুস্থ তাদেরকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি করে নেয়। সরকারী উদ্যোগে হাসপাতালগুলিত রোগীর চিকৎসা-খাবার চললেও রোগীর সাথে আপনজন যারা থাকে তারা পড়ে অন্যরকম এক বিপদে। কারণ, জরুরি সেবা ছাড়া আর কিছুই খোলা থাকছে না। এক বেলা হোটেল খোলা থাকলেও রাতে খাবারের হোটেলগুলো থাকে বন্ধ।
খাবার হোটেলসহ সব কিছু বন্ধ থাকায় তাদের অনাহারে দিন কাটে-এমন সংবাদে কতিপয় তরুণ তাদের পাশে এসে দাড়ায়। প্রথমে শখের বসে তারা এই কাজ করলেও তাদের পাশে এসে দাড়ায় এস.এস. সি ৯১ যশোরের অন্যান্য বন্ধুরা। “আমরা তো আমরাই ” এই ব্যানারে কোমর বেধেঁ তারা মানব সেবায় নেমে পড়ে। প্রতিদিন একবেলা খাবার বিতরণের মাসব্যাপী এই মহা উদ্যোগে চারীদিকে ধূম পড়ে যায়। প্রথমদিকে ৫০ প্যাকেট করে দিলেও সর্বশেষ ২১ জুলাই পবিত্র ঈদ উল আযহা পর্যন্ত তাদের তালিকায় যুক্ত হয়েছে প্রায় ১৭২ প্যাকেট। প্রতিদিন কাটায় কাটায় রাত ৮ ঘটিকায় সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাদের এই মহাপূণ্যের কাজ। তাদের এই কাজের সবচেয়ে মূল্যবান দিক হলো তারা কখনো খাদ্যগ্রহণ কারীদের কোন ছবি তোলে না এবং কাউকে তুলতে বা কোথায় প্রকাশ করে না।
মানুষ মানুষের জন্য। আলো কখনো বদ্ধ ঘরে থাকে না। এস.এস. সি ৯১ যশোরের বন্ধুদের “আমরা তো আমরাই ” এই শ্লোগান যশোরবাসীকে যেন ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। করোনা দূর্যোগ মোকাবেলায় মানব সেবায় আর কি কি করা যায় তার জন্য নেমে পড়ে নানা ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। এরই মধ্যে সংবাদ আসে যশোরে অক্সিজেন সংকট প্রকট। কিন্তু এখন যশোরবাসীর জন্য এই সংকট আর কোন সংকটই না। মাত্র একটি টেলিফোনেই রোগীর বাড়ীতে চলে যাচ্ছে সম্পূর্ণ ফ্রি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ডাক্তার। চাঁদের হাট, আদদীনসহ নানা সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান যশোরের করোনাক্রান্ত মানুষদেরকে বেঁচে থাকার আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে।
২৩ জুলাই থেকে দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে কঠোর লক ডাউন। আশাকরি এই লকডাউনে এস.এস. সি ৯১ যশোরের বন্ধুদের “আমরা তো আমরাই”র মত সারাদেশজুড়ে করোনা আক্রান্ত ও লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সেবায় তরুণ প্রজন্ম ঝাপিয়ে পড়বে। এবার আমাদের শ্লোগান হবে “আমরা তো আমরাই, আমরা তো সবাই বাংলাদেশী”।